শরীফ আজাদ::উখিয়ায় জালিয়া পালং ইউনিয়নের পান্যাসিয়া সড়ক থেকে বের হচ্ছে ট্রাকের পর ট্রাক মাটি। সরজমিনে পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখলে অবাক হবেন যে কেউ। নির্বিচারে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা। সরকারি আইনকে অমান্য করে জয়নাল/আরাফাত সিন্ডিকেট চক্র পাহাড়ের মাটি অবৈধ ভাবে কেটে ট্রাক, ডাম্পার ও পিকআপ যোগে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠন।
সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জানা যায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকহারে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। দালান, বাড়িঘর ও দোকান মার্কেট নির্মাণ করার জন্য জায়গা ভরাট করতে হাজার হাজার ফুট মাটি প্রয়োজন। কয়েকটি সিন্ডিকেট সরকারি পাহাড় কেটে ভরাট কাজে মাটি যোগান দিচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে ইনানী রেঞ্জের আওতাধীন জালিয়াপালং বন বিটের অধীনে দক্ষিণ পাইন্যাশিয়া ও জুম্মা পাড়ার সরকারি বনভূমি এবং পাহাড় কর্তন করে প্রতিদিন মাটি সরবরাহ করছে উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সুলতান মাহামুদ ছৌধুরির ছোট ভাই জয়নাল উদ্দিন চৌধুরি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক অারাফাত চৌধুরি সিন্ডিকেট।
অভিযোগে প্রকাশ স্থানীয় বন বিভাগকে ভয়ভিতি দেখিয়ে সচিবের কাছের লোক পরিচয় দিয়ে সংরক্ষিত এলাকা হতে ট্রাক-পিকআপ ও ডাম্পার ভর্তি করে হাজার হাজার ঘনফুট মাটি পাচার করছে জয়নাল/ আরাফাত সিন্ডিকেট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান উপজেলা প্রশাসনের চাপের মুখেও সচিবের প্রভাব বিস্তার করে রাত দিন ২৪ ঘন্টা জয়নাল/আরাফাত সিন্ডিকেট মাটি পাচার করেছে। ট্রাক, ডাম্পার ও পিকআপ যোগে মাটি ভর্তি করে কোট বাজার, মরিচ্যা, রত্নাপালং, রুমখা বাজার সহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পেরর বিভিন্ন জায়গায় মাটি বিক্রয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সরকারি বনভূমি হতে পাহাড় কর্তন ও মাটি সরবরাহ নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় জয়নাল/আরাফাত সিন্ডিকেট সদস্যরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখি একের পর এক পাহাড় কর্তন করেই যাচ্ছে। বর্তমানে এমন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যেন সরকার ইনানীর সকল পাহাড় এই সিন্ডিকেটকে বিক্রয় করে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান কেউ পাহাড় কর্তন ও মাটি পাচারে বাধা দিলে উল্টো তাদেরকে হুমকিসহ মারধর করা হয়। বর্তমানে দক্ষিণ পান্যাসিয়া ও জুম্মা পাড়ায় পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে। প্রকাশ্যে অবৈধ পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখলে মনে হবে বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
তবে বন কর্মকর্তারা জানান আমরা বিভিন্ন সময় বাধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। আমাদেরকে জয়নাল/আরাফাতের লোকরা চাকু দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক আরাফাত নিজে চাকুদিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করেছে।
তিনি কেদে দিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন আমরা অনেক দুর থেকে চাকরি করতে এসেছি। আমরা নিরাপত্তা হীনতায় থাকি। আমাদের ফ্যামেলি আছে। আপনারা সাংবাদিকরা আমাদের দোষ দেন। অথছ যারা পাহাড় কাটছে তারা উপরের মহলের বড় স্যারদের ক্ষমতা দেখায়।
নাম প্রকাশ না করর অারেক বনকর্মকর্তা বলেন অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে আমার মোটরবাইক লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে জয়নাল/আরাফাতের লোকজন। এমন কি আমার সাথে এসিলেন্ড স্যার অভিযানে ছিল। স্যারের গাড়ী পাম্পচার করে দিয়েছিল। আমাদের গায়ে হাত পযন্ত দিয়েছে। পরে এসিলেন্ড স্যার থানায় ওসি স্যার কে ফোন করেন। তিনি ফোর্স নিয়ে আমাদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্বার করেছে।
পাহাড় কাটার ব্যাপারে ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন জানান ইতিমধ্যে পাহাড় কাটার অভিযোগে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে জড়িতদের কে গ্রেপ্তারসহ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় লোক বলের কারনে এবং স্হানীয় কিছু প্রভাবশালীদের কারনে সমস্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সরকারি পাহাড় গুলো সুরক্ষা করতে অবিলম্বে পাহাড় কর্তন এবং মাটি পাচার বন্ধের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিকট দাবি জানিয়েছেন।